Sunday, April 29, 2018

সুন্দরবনঃ পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সম্পর্কে কিছু তথ্য - ১৪

সুন্দরবনের মৌমাছি ও মৌচাক : বৃক্ষ ও মাছের পাশাপাশি সুন্দরবন বাংলাদেশের মধ্যে মধু উৎপাদনে সর্বশ্রেষ্ঠ। সুন্দরবনের মধু গুনে ও মানে বেশ সুখ্যাতি আছে। বিশুদ্ধতাও সুন্দরবনের মধুর জুড়ি নাই। প্রতি বছর হাজার হাজার মন মধু ও মোম সুন্দরবন হতে উৎপাদন হয়। বাংলাদেশের দু’ ধরনের মৌমাছি আছে। এপিস সিরানা ও এপিস ডড়সেটা। এপিস সিরানা মৌ চাষের জন্য ব্যবহার করা হয়। আর এপিস ডগসেটা বন্য ও হিংস্র মৌমাছি। এরা গাছ গাছড়ায় বাসা বাঁধে ও এক স্থান হতে অন্য স্থানে চলে যায়। সুন্দরবনের মৌমাছির নাম হল এপিস ডড়সেটা। এ বন্য মৌমাছিরকে পোষ মানানো যায় না। মৌমাছি ফুলের মধু ও রেনু খেয়ে জীবন ধারণ করে। এপিস ডড়সেটা মৌমাছিকে জায়ান্ট মৌমাছিও বলে।

শত শত লোক প্রতি বছর সুন্দরবন হতে যে মধু ও মোম সংগ্রহ করে তাদেরকে মৌয়ালী বলা হয়। সুন্দরবনে নানা ধরনের উদ্ভিদ আছে। প্রায় গাছেই ফুল ফুটে। কিন্তু সব গাছ হতে মৌমাছি মধু সংগ্রহ করে না। সুন্দরবনের যে সব গাছ হতে মৌমাছি মধু সংগ্রহ করে সেগুলো হল- খলসী, বাইন, সাদা বাইন, কাকড়া, গরান, গেওয়া, ঝানা(গর্জন), কেওড়া, ছইলা, পশুর, হারগাছা, শিংড়া। সুন্দরবনকে লবনাক্ততার উপর নির্ভর করে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা- লবন পানির এলাকা, মধ্যম লবন পানির এলাকা ও মিঠা পানির এলাকা।

সুন্দরবনের পশ্চিম অংশ হল লবণ পানির এলাকার অন্তর্ভূক্ত, শরণখোলা রেঞ্জ হল মিঠা পানির এলাকার অন্তর্ভূক্ত। সুন্দরবনে বেশী মধূ উৎপন্ন হয় লবন পানির অঞ্চল হতে। অর্থাৎ সুন্দরবরে যে চারটি রেঞ্জ আছে তম্মধ্যে সাতক্ষীরা রেঞ্জে বেশী মধু উৎপন্ন হয়। সংক্ষেপে বলা যায় সুন্দরবনের প্রায় ৯০ ভাগ মধু সাতক্ষীরা রেঞ্জের বনাঞ্চল হতে উৎপন্ন হয়। এর কারণ হল সাতক্ষীরা রেঞ্জের বনাঞ্চলে প্রচুর মধু উৎপাদনকারী গাছ যথা- খলসী, গরাণ, গেওয়া, কেওড়া প্রভুতি গাছ আছে। মৌমাছি যে সব গাছ হতে মধু সংগ্রহ করে তার উপর নির্ভর করে সুন্দরবনের মধূকে সাধারনত চার ভাগে ভাগ করা হয়। যথা খুলাসীর মধু, গরানের মধু, কেওড়ার মধু ও গেওয়ার মধু। তম্মধ্যে খলসীর মধু মানে ও গুনে সব চাইতে বেশী ভাল। তারপর যথাক্রমে গরাণ, কেওড়া ও গেওয়ার মধু। বছরের প্রথমে খলসীর মধু উৎপন্ন হয়। কারণ খলসী ফুলফুটে সবার আগে। মার্চ ও এপ্রিল মাসে খলসী গাছে প্রচুর ফুল থোকায় থোকায় ফুটে। খলসী গাছ নদীর চরে সারিবদ্ধভাবে গোলপাতার পাশে জম্মায়। খলসী গাছ ১৫-২০ ফুট লম্বা হয়। অনেক দুর থেকে মৌমাছি খলসী গাছের ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করতে আসে।

সুন্দরবনে সারা বছর মধু পাওয়া যায় না। বছরের চার মাস মধু সংগ্রহের কাজ চলে। এ সময় মৌয়ালীদের মধু সংগ্রহে বেশ ব্যস্ত থাকতে হয়। এপ্রিল মাসের ১লা তারিখে ফরেষ্ট ষ্টেশন হতে পাশ দেয়া হয়। ঐদিন প্রতি ষ্টেশনে মৌয়ালীদের নিয়ে একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সমাবেশে কিভাবে মধু সংগ্রহ করতে হবে এবং বনের ভিতর মৌমাছি ও বন্য প্রাণীর আক্রমন হতে কিভাবে রক্ষা পাওয়া যায় তা আলোচনা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তারপর এক রাউন্ড গুলি করে ফাকা আওয়াজ করা হয়। ফাঁকা আওয়াজের সাথে সাথে মৌয়ালীরা তাদের নৌকা নিয়ে ছোটে বনের ভিতর। প্রতিযোগিতা শুরু হয় আগে কে যাবে বনের ভিতর জায়গা দখলের জন্য। যে যেখানে পৌছে সেখান থেকেই মধু আহরণ করে সারা মৌসুম। সে জায়গায় অন্য মৌয়ালী মধু আহরণ করে না। এ প্রথা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। মৌয়ালীরাও এটা খুব শক্ত করে মনে প্রাণে অনুসরণ করে।
বণ হতে মধূ সংগ্রহ করা বেশ কষ্টকর ও ভীষন ঝুকিপূর্ণ কাজ। মধু সংগ্রহের সময় মৌমাছি দ্বারা মৌয়ালীরা আক্রান্ত হতে পারে। সুন্দরবনে অসংখ্য বাঘ আছে। যেকোন সময়েই মৌয়ালীরা বাঘের সম্মুখীনও হতে পারে। তাই মৌয়ালীরা সব সময় দলবদ্ধভাবে মধু সংগ্রহ করে।

এক এক দলে ৭ জন মৌয়ালী থাকে। মধু সংগ্রহের সময় প্রতি বছর বেশ ক’জন মৌয়ালী বাঘের হাতে মারা যায়। মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে মৌয়ালীরা বাঘের হাতে মারা যাচ্ছে শুনলে মনে খুব ব্যথা ও কষ্ট লাগে। ভাবতে অবাক লাগে যে, তারা জীবনকে বাজি রেখে সুন্দরবন হতে মধু সংগ্রহ করে। আমরা কি তাদের নিরাপত্তা দিতে পারি না ? তবে হ্যা মধু সংগ্রহের সময় চোখ ও কান খোলা রেখে মধূ সংগ্রহ করতে হবে।

অবশ্য এসব কথা বাওয়ালীদের বনে প্রবেশ করার আগে বলে দেওয়া হয়। কিন্তু বনে প্রবেশ করে মৌমাছির বাসা খুজতে খুজতে মৌয়ালীরা যখন ব্যস্ত থাকে, কোন দিকে লক্ষ থাকে না ও দিশেহারা হয়ে যায় তখন তারা বাঘের কবলে পড়ে। মধু সংগ্রহের সময় মৌয়ালীরা প্রথমে মৌমাছির ব্সাা সনাক্ত করে। তারপর তারা মৌমাছির বাসায় ধুয়া দেয়। যখন ধুয়ার তীব্রতায় মৌমাছি টিকতে পারে না তখন মৌমাছিরা বাসা ছেড়ে চলে যায়। এরপর মৌয়ালীরা চাক হতে মধু ও মোম কেটে পাত্রে রাখে। অতঃপর মধু ও মোম পৃথক করে আলাদা পাত্রে রাখা হয়। মৌয়ালীরা সাধারণতঃ মটকায় মধু রাখে। মধু আহরণ কালীন চাকের যে অংশে মধু থাকে সে অংশ কেটে মধু সংগ্রহ করা হয়। শুধুমাত্র পরিপক্ক মৌচাক হতে মধু সংগ্রহ করতে হয়।

সুন্দরবনের মৌমাছি গ্রামাঞ্চলের মৌমাছি হতে বড়। মৌমাছি সাধারণত মাটি হতে ৫-১৫ ফুট উচুতে মৌচাক তৈরী করে। মৌমাছির মধু সংগ্রহ বাড়ার সাথে সাথে মৌচাকের আকার বাড়ে। কোন কোন চাকে ২০-৩০ কেজি মধু পাওয়া যায়। মৌমাছিদের জীবন ধারণ আশ্চর্য্যরে বিষয়। মৌমাছি সমাজবদ্ধ জীব। এরা দলবদ্ধভাবে বাসা বেধে বাস করে। এত ক্ষুদ্র জীব অথচ এদের এত নিয়মকানুন এবয় এ সব নিয়ম কানুন প্রতিটি মৌমাছি অক্ষরে অক্ষরে পালন করে। একটি মৌমাছির দল একটি ব্সাা বাধে। প্রতি বাসায় বা মৌচাকে একজন রাণী মৌমাছি থাকে। রাণী মৌমাছির অধীনে একদল স্ত্রী মৌমাছিও একদল পুরুষ মৌমাছি থাকে স্ত্রী মোমাছি প্রজনন অক্ষম থাকে। এদেরকে শ্রমিক মৌমাছি বলে। পরিমানের দিক দিয়ে এক এক মৌচাকে কয়েক হাজার শ্রমিক মৌমাছি থাকতে পারে। পুরুষ মৌমাছি এক কলনীতে প্রায় কয়েক শত থাকে। পুরুষ মৌমাছিকে ড্রোন্স বলে। মৌচাকে তিন ধরনের কোষ থাকে। যথা শ্রমিক কোষ, ড্রোন্স কোষ ও রানী কোষ। শ্রমিক কোষ আকারে ছোট এবং ড্রোনস কোষ আকারে বড় হয়। বাসার মধখানে শ্রমিক কোষে মৌমাছির অপ্রাপ্ত বয়স্ক মৌমাছি লালন পালন করে। বাসার উপরের অংশে মধু সঞ্চয় করে। বাসার পার্শ্বে পরাগ ও নেকটার সঞ্চয় করে। ড্রোন কোষে মৌমাছি ড্রোন লালন পালন করে। রাণী কোষে রাণী মৌমাছিকে লালন পালন করা হয়। বিশেষ বংশ বৃদ্ধির নিমিত্তে নৃতন ঝাক বা দল গঠন করার জন্য রাণী কোষ তৈরী করা হয়।

সুন্দরবনের মধূ : ডিম হতে রানী মৌমাছি তৈরী হতে ১৬ দিন সময় লাগে। শুক কীট হতে পূর্ণাংগ রানী মৌমাছি হওয়া পর্যন্ত তাকে রয়েল জেলী খাওয়ানো হয়। শ্রমিক মৌমাছির হাইফোফিরিনজিয়াল গ্রন্থি হতে রয়েল জেলী নিঃসৃত হয়। রয়েল জেলী চর্বি ও পোটিনে সমৃদ্ধ। ৫ দিন বয়সের কুমারী রানী মিলনের জন্য আকাশে উড়তে থাকে। এক বা একাধিক উড়ার সময় কুমারী রাণী মৌমাছি প্রায় ৭টি ড্রোনের সাথে মিলিত হয়। রাণীর বীর্যধারে ড্রোনের বীর্য সারা জীবন সঞ্চিত থাকে। একটি রাণী ৫ বছর পর্যন্ত বাঁচে। তবে প্রথম দু’ বছর তার কাজের আগ্রহ ও তীব্রতা বেশি। একটি কলোনী বা মৌচাকে একটি রাণী মৌমাছি কয়েকশ’ হতে কয়েক হাজার ডিম পাড়ে। ডিম পাড়ার সংখ্যা কম বেশি নির্ভর করে রাণীকে ভাল খাওয়ানো ও ডিম পাড়ার জন্য চাকের ভিতর খালি কোষের প্রাপ্যতার উপর।

মৌমাছির বাসায় বা কলোনীতে সামাজিক শৃংখলা বজায় রাখার জন্য রাণী মৌমাছি ফেরোমোন নামক এক ধরনের পদার্থ তৈরী করে। একে কুইন সাবষ্ট্যান্স বা রাণী নির্যাস বলে। মৌচাকে রাণী নির্যাস ছড়িয়ে দেয়া মৌমাছিদের জীবনে একটি প্রয়োজনীয় উপাদান। রাণী নির্যাসের উপস্থিতির জন্য শ্রমিক মৌমাছিরা বুঝতে পারে রাণী মৌমাছি বাসায় আছে কি নেই। কনিষ্ঠ শ্রমিক মৌমাছিরা রাণী মৌমাছিকে খাবার পরিবেশন করে। শরীর ফুটো করে রাণী নির্যাস বের করে। অন্যরা মৌমাছির মধ্যে ছড়িয়ে দেয়। কনিষ্ঠ মিলিত রাণী বেশি পরিমাণে রাণী নির্যাস উৎপাদন করে বিধায় শ্রমিক মৌমাছির ডিম্বাশয়ে পূর্ণতা লাভ করতে পারে না। বয়স্ক রাণী মৌমাছি সামান্য পরিমাণে রাণী নির্যাস উৎপন্ন করে। এর ফলে শ্রমিক মৌমাছিদের ডিম্বাশয়ে পূর্ণতা লাভ করে। তখন এরা রাণী কুঠরী তৈরী করে থাকে। কোন কারনে যখন রাণী মৌমাছি বৃদ্ধ হয়ে যায় তখন পূর্ণ ডিম্বাশয় যুক্ত শ্রমিক মৌমাছি রাণীর স্থল দখল করে। এ প্রকার রাণীকে সুপারসিডর রাণী বলে। আবার যখন মৌচাকে শ্রমিকের সংখ্যা বেশী হয়ে যাবার ফলে জায়গার অভাব হয়, বিপুল সংখ্যক মৌমাছিদের মধ্যে একটি মাত্র রাণীর নির্যাস খুব নগন্য হয় এবং প্রচুর সেবিকা মৌমাছি একটি রানী মৌমাছিকে সেবা করে তাদের গ্রন্থির জেলী শেষ করতে পারে না তখন তারা নতুন রাণীর কোষ তৈরী করে। নতুন রাণী ফুটে বেরিয়ে আসার আগেই পুরান রাণী কিছু শ্রমিক মৌমাছি নিয়ে মৌচাক ত্যাগ করে এবং নতুন জায়গায় গিয়ে চাক তৈরী করে। নতুন রাণী মৌমাছির কাজ অব্যাহত রাখে।

কোন কারণে রাণী হারিয়ে বা মৃত্যু হয়ে গেলে নতুন রাণী জন্ম হয়। এ প্রকার রাণীকে জরুরী রাণী মৌমাছি বলে। শ্রমিক মৌমাছিও নিষিক্ত ডিম হতে জন্ম নেয়। ডিম হতে পুর্ণাঙ্গ শ্রমিক মৌমাছি তৈরী হতে সময় লাগে ২১ দিন। শ্রমিক মৌমাছি কি ধরনের কাজ করবে তা নির্ভর করে তাদের শরীর বৃদ্ধি ও কাঠামোগত প্রস্তুতির উপর। আবহাওয়ার উদ্দিপক এবং কলোনীর চাহিদার উপর শ্রমিক মৌমাছির শরীর বৃদ্ধির ও বাহ্যিক গঠন প্রজনন ছাড়া সব ধরনের কাজ করার জন্য উপযুক্তভাবে তৈরী। এদের দেহে নেকটার সংগ্রহের জন্য জিহবা ও মধু থলি, পরাগ সংগ্রহের জন্য পরাগ থলি, রয়েল জেলি তৈরীর জন্য গ্রন্থি প্রস্তুতের জন্য এনজাইম, চাক তৈরীর জন্য মোম ও বাসা রক্ষার জন্য ভেনম আছে। শ্রমিক মৌমাছি গ্রীষ্মকালে চার সপ্তাহ এবং শীতকালে ছয় মাস পর্যন্ত বেঁচে থাকে। শ্রমিক মৌমাছি কখনো ঘর মৌমাছি এবং কখনো মাঠ মৌমাছি হিসাবে কাজ করে থাকে। কোষ হতে বের হওয়ার সাথে সাথে এরা নেকটার বা পাতলা মধুর সাথে পরাগ মিশ্রিত খাবার গ্রহণ করে। একদিন বয়সে শ্রমিক মৌমাছি চাকের কোষ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে। ৫ দিন পর্যন্ত এরা বয়োজ্যেষ্ঠ শুককীটদের মিশ্রিত খাবার এবং রাণী মৌমাছিকে রয়াল জেলী খাওয়ায়। ৫-৮ দিনের মধ্যে শ্রমিক মৌমাছি দিক নির্ণয়ক এবং পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ফ্লাইটে যায়। প্রচুর পরিমানে মধু গ্রহনের ফলে ৮ দিন বয়সে শ্রমিক মৌমাছির বুকের নীচে চার জোর মোম গ্রন্থি তৈরী হয়। এসব গ্রন্থি হতে প্রচুর পরিমানে মোম নিঃসৃত হয় যা বাসা তৈরী ও কোষের মুখ বন্ধ করার কাজে লাগে। ১১ দিন বয়সে শ্রমিক মৌমাছির লালা গ্রন্থি তৈরী হয় যা দ্বারা এরা নেকটারকে মধুতে রূপান্তর করে। এরা মাঠ মৌমাছিদের নিকট হতে নেকটার গ্রহণ করে। এরপর নেকটারের সাথে এনজাইম ইনভাটেক মিশ্রিত করে নেকটারে রক্ষিত সুক্রোজকে ভেংগে ফ্রুকটোজ এবং গ্লুকোজে রূপান্তর করে। মধূ হতে অতিরিক্ত জলীয় অংশ বের করার জন্য শ্রমিক মৌমাছিরা তাদের প্রবোসিস দিয়ে চাকের ভেতরে পাখার মাধ্যমে প্রবাহিত গরম বাতাসের মধ্যে ধরে রাখে।

১৪ দিন বয়সে শ্রমিক মৌমাছি আলো বাতাস চলাচলের মাধ্যমে চাকে তাপমাত্রা বজায় রাখতে সক্ষম হয়। ১৮ দিন বয়সে কলোনীতে অবস্থানরত মৌমাছিরা চাকের প্রহরার কাজের জন্য উপযুক্ত হয়। কারণ এ সময় তাদের পেটের শেষ প্রান্তে বিষাক্ত গ্রন্থি তৈরী হয়। সাধারণত ৩ সপ্তাহ বয়সে শ্রমিক মৌমাছি মধু সংগ্রহের জন্য মাঠে যাওয়া শুরু করে। প্রথমে শ্রমিক মৌমাছি যখন মাঠে যাওয়া শুরু করে তখনও এদের গায়ে লোম থাকে।

তখন এরা শুধু পরাগ সংগ্রহ করে। যখন লোম পড়ে যায় তখন এরা মৌচাক বা কলোনীর চাহিদা অনুযায়ী নেকটার, পানি বা প্রপলিস সংগ্রহ করে। মাঠ মৌমাছির আয়ুস্কাল নির্ভর করে কাজের পরিধি ও কঠিনতার উপর। মুখ্য মধু প্রবাহের সময় শ্রমিক মৌমাছি ৩০ দিন বাঁচে। তার মধ্যে ২০ দিন মৌচাকের বিভিন্ন কাজ করে এবং ১০ দিন পরাগ ও নেকটার সংগ্রহ করে। পুরুষ মৌমাছি রাণীর অনিষিক্ত ডিম হতে জন্ম নেয়। ঝাক বাঁধার সময় শুরু হওয়ার পুর্বে অল্প সময়ের জন্য কলোনীতে পুরুষ মৌমাছি লালন পালন করা হয়। রাণী মৌমাছি বড় কোষে পুরুষ মৌমাছি হওয়ার জন্য ডিম পাড়ে। ডিম হতে পূর্ণ বয়স্ক মৌমাছি হদে ২৪ দিন সময় লাগে।

রাণী বিহীন কলোনীতে রাণীর নির্যাসের অভাবে শ্রমিক মৌমাছির ডিম্বাশয় পূর্ণতা লাভ করে। তখন তারা অনিষিক্ত ডিম পাড়ে। তাদের ডিম হতেই পুরুষ মৌমাছি জন্ম গ্রহণ করে। পুরুষ মৌমাছির কাজ হল রাণী মৌমাছির সাথে মিলিত হওয়া। ৬ দিন বয়সে পুরুষ মৌমাছি উড়তে আরম্ভ করে। ১২ দিন বয়সে তারা পূর্ণতা লাভ করে। এক জায়গায় পুরুষ মৌমাছিরা একটা নির্দিষ্ট এলাকা পর্যন্ত উড়ে বেড়ায়। সে এলাকাকে পুরুষ মৌমাছির সমাবেশের জায়গা বলে। এ জায়গায় কুমারী রাণী মৌমাছি উড়ে বেড়ায়। সফলভাবে মিলনের জন্য অনেক পুরুষ মৌমাছি মারা যায়।

মধু প্রবাহের শেষ ভাগে মৌচাকে পুরুষ মৌমাছি লালন পালন বন্ধ হয়ে যায়। যারা থেকে যায় তাদেরকে শ্রমিক মৌমাছিরা মৌচাক থেকে বের করে দেয়। এক হাজার পুরুষ মৌমাছি তাদের আয়ুস্কালে খাদ্য হিসেবে ৭ কেজি মধু গ্রহণ করে থাকে।

No comments:

Post a Comment

Follow Us @VisitSundaebon