Sunday, April 29, 2018

সুন্দরবনঃ পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সম্পর্কে কিছু তথ্য - ১৮


সুন্দরবনের বাইন গাছ :

বাইন সুন্দরবনের একটি অতি পরিচিত গাছ। এটি একটি চির সবুজ বৃক্ষ। সাধারণতঃ বাইন গাছ ১৩ মিঃ – ২০ মিঃ উচু এবং ৪-৫ মিঃ বেড় হয়ে থাকে। সুন্দরবনের নদী ও খালের পাড়ে বাইন গাছ জন্মিতে দেখা যায়। বাইন গাছ সুন্দরবনের একটি সুউচ্চ বৃক্ষ। ডাল পালা সমেত এ গাছটিকে প্রকান্ড বড় দেখায়। বাইন গাছ একক ভাবে জন্মে থাকে। তবে কোন সময় কেওড়া ও গোলপাতার সাথে জন্মিতে দেখা যায়। বাইন বনের সৌন্দর্য্য ভ্রমনকারীদের আকৃষ্ট করে। বাইন গাছের স্বাস মূল আছে। মার্চ-জুন মাসে বাইন গাছে ফুল ফুটে। তখন অসংখ্য মৌমাছি বাইনের ফুল হতে মধু সংগ্রহ করে। বাইনের মধুকে বাইন মধু বলে। জুলাই আগষ্ট মাসে ফল পাকে। বাইনের বীজ পানিতে ভাসে এবং সে জন্য বাইন বীজ জোয়ার-ভাটার সময় বনের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে অংকুরিত হয়। বাইন গাছ শক্তিশালী আলো ডিমান্ডার। সাধারণতঃ এটি একটি নতুন লোনা মাটিতে অগ্রজ প্রজাতি। নতুন মাটি হলেই খাল বা নদীর ধারে বা চরে বাইন জন্মে থাকে। প্রতি বছর বাইন গাছের ২.৮৪ হতে ৬.৩৬ মিঃমিঃ ডায়ামিটার বৃদ্ধি পায়। বাইন গাছ জ্বালানী হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন ধরনের বাইন গাছ আছে। যেমন মরিচা বাইন, সাদা বাইন ইত্যাদি।

সুন্দরবনের কাকড়া গাছ :

কাকড়া সুন্দরবনের একটি সুন্দর দৃশ্যমান বৃক্ষ। যেখানে কাকড়া বন আছে সে বন দেখলে অপুর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মন ভরে যায়। কাকড়া গাছ ডালপালা ছাতিম গাছের মত তবে সংখ্যায় নগন্য। কান্ড সোজা সুপারি গাছের মত দেখায় একটু পর পর চক্রাকারে কিছু ডালপালা আছে। মাথায় এক গুচ্ছ ডালপাতা আছে। দেখরে মনে হয় যেন গাছের মাথায় একটি সবুজ ছাতা বসে আছে। কালাবগীর কাছের কাকড়া বন ও করমজলের কাছে কাকড়া বাগান দেখলে অপরূপ সৌন্দর্যে ভ্রমনকারীরা বিমোহিত হয়ে যায়। কাকড়া একটি চির সবৃজ বৃক্ষ। এ বৃক্ষ ৩০ মিঃ পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। কাকড়া গাছের বাকল ধুসর হতে বাদামী রং এর হয়। এ গাছের বেটে বায়বীয় প্রোপ মূল আছে। জুলাই-আগষ্ট মাসে কাকড়া গাছে ফুল আসে এবং আগষ্ট-সেপ্টেম্বর মাসে ভ্রুন গাছ হতে ঝড়ে পড়ে। ফল গাছে থাকতে বীজ অংকুরিত হয়। কাকড়া আলো ভালবাসে। তবে বাল জীবনে বেশি হাল্কা আলো পছন্দ করে। কাকড়া চারার বৃদ্ধি প্রায় ৩-৪ বছর কম হয়। তারপর বৃদ্ধি খুব দ্র“ত হয়। কাকড়া গাছের কাঠ লালচে বাদামী ও অত্যন্ত শক্ত। এ কাঠ বিম, খুটি, বৈদ্যুতিক খুটি, চিরাই কাঠ ও জ্বালানী কাঠ হিসে্ে ব্যবহৃত হয়। কাকড়া গাছের বাকল হতে টেনিন তৈরী হয়।

সুন্দরবনের পশুর গাছ :

পশুর সুন্দরবনের একমাত্র আসবাবপত্র তৈরীর বৃক্ষ। সুন্দরবনের সর্বত্র পশুর গাছ আছে। পশুর একক ভাবে খুব কম জন্মে। সাধারণতঃ সুন্দরীম গেওয়া ও বাইন গাছের সাথে পশুর জন্মে থাকে। পশুর একটি পত্র ঝরা প্রকান্ড বৃক্ষ। মার্চ-এপ্রিল মাসে পাতা ঝরে যায়। পশুর গাছের স্বাসমূল আছে। গাছে যথেষ্ট ডালপালা থাকে। পাতাগুলো গাঢ় সবুজ। পশুর গাছের স্বাসমুল সাধারণতঃ ৩০-৩৫ সেমি লম্বা হয় এবং দেখতে ডেগারের মত। মে-জুন মাসে গাছে ফুল আসে। জুন-জুলাই মাসে ফল পাকে এবং বীজ মাটিতে পড়ে। জোয়ারের পানিতে বীজ এক স্থান হতে অন্য স্থানে যায়। পশুর বদ্ধ জলাশয় ও আলো পছন্দকারী বৃক্ষ। ইহা যে কোন লবনাক্ততা পছন্দ করে। বীজ হতে প্রাকৃতিক ভাবে গাছ জন্মায়। সাতক্ষীরা ও খুলনা রেঞ্জে বেশি পরিমানে পশুর গাছ দেখা যায়।

সুন্দরবনের কেওড়া গাছ :

কেওড়া সুন্দরবনের আকর্ষণীয় গাছ। নতুন জেগে উঠা চরে সর্বপ্রথম কেওড়া গাছ জন্মায়। চির সবুজ এ বৃক্ষের পাতা চিত্রা হরিেেনর অতি প্রিয় খাদ্য। যেখানে কেওড়া গাছ বেশি সেখানে হরিণও বাস করে বেশী। কেওড়া একক ভাবে জন্মে থাকে। কেওড়া বাগানের দৃশ্য খুবই নয়নাভিরাম। কটকা, কচিখালী, নীলকমল, তিনকোণা দ্বীপ, মান্দারবাড়ীয়ার কেওড়া বন সত্যিই সুন্দর। এ বন ভ্রমনকারীদের মনে আনন্দের খোরাক যোগায়। দুর হতে অবলোকন করলে কেওড়া বনের গাছগুলোকে সমউচ্চতায় এত ঘন ও সবুজ দেখায় যা ভুলবার নয়। কেওড়া বনকে কেওড়া শুটিও বলা হয়। নীলকমলে কেওড়া শুটিতে বন্যপ্রাণী পর্যবেক্ষনের জন্য একটি টাওয়ার আছে। কেওড়া একটি দ্রুত বর্ধনশীল চির সবুজ বৃক্ষ। এটি একটি সুন্দরবনের সুউচ্চ বৃক্ষ। এ বৃক্ষ ৩০ মিঃ পর্যন্ত লম্বা হয় এবং বুক সমান উচ্চতায় বেড় ১.৫ মিঃ পর্যন্ত হয়। কেওড়া কোন কোন সময় গেওয়া, গরাণ বা সুন্দরী গাছের সাথে মিশ্র ভাবে জন্মে থাকে। কেওড়া গাছের কান্ড সোজা ও লম্বা হয়। ডালগুলো নীচের দিকে ঝুলে থাকে। গাছের বাকল গাঢ় বাদামী। শ্বাস মূল ৬০-১৫০ মিমি লম্বা হয়। সুন্দরবনের সর্বত্র কেওড়া গাছ দেখা যায়। জুলাই মাসে ফুল হয় এবং সেপ্টেম্বর মাসে ফল পাকে। কেওড়া ফল খেতে টক লাগে। কেওড়া পাতা ও ফল হরিনের প্রিয় খাদ্য। বনের খুব আনন্দ করে কেওড়া ফল খায়। কেওড়া আলো পছন্দকারী বৃক্ষ। গাছ হতে বীজ পানিতে পড়ে ভেসে এক স্থান হতে অন্য স্থানে যায়। সুন্দরবনে কেওড়া বন প্রাকৃতিক ভাবে বীজ হতে গড়ে উঠে। বড় বৃক্ষের ছায়ার নিচে কেওড়া গাছ জন্মে না। কেওড়া কাঠ টেকসই নয়। তাই এ কাঠ শুধু জ্বালানী কাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সুন্দরবনের কেওড়া কাঠ লট আকারে বিক্রয় নিষিদ্ধ। বাছাই পদ্ধতিতে সরকারী ভাবে কেওড়া কাঠ আহরণ করা হয়। বুক সমান উচ্চতায় ১২ ইঞ্চি ডায়মিটার বা তদউর্দ্ধ গাছ কর্তন করা হয়। মৃত ও মরা গাছও আহরণ করা হয়। কেওড়া গাছ মরে গেলে সে জায়গায় গেওয়া গাছ পরবতীতৈ জন্মে থাকে। উল্লেখ্য যে, পশুর কাঠ লাল এবং টেকসই হয়। উন্নতমানের আসবাবপত্র যেমন খাট, পালংক, সোফা, টেবিল প্রভৃতি পশুর কাঠ দিয়ে তৈরী করা হয়। পশুর কাঠকে সুন্দরবনের সেগুন বা মেহগনি কাঠ বলা হয়।

সুন্দরবনের গরাণ গাছ :

গরাণ সুন্দরবনের বিখ্যাত জ্বালানী কাঠ। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মন গরান জ্বালানী কাঠ সুন্দরবন হতে আহরণ করা হয়। দু’ ধরনের গরাণ সুন্দরবনে আছ। যথা- বাছাই গরাণ ও খাদি গরাণ। একটি গরাণ ঝাড়ে বেশ কটি গরাণ গাছ থাকে। একটি গরাণ গাছ ৫ ফুট বা তদউর্ধ লম্বা হলে এবং গোড়ার ডায়ামিটার ১ ইঞ্চি হলে তাকে বাছাই গরাণ বলে। অপরদিকে জ্ব্লাানী কাঠ উপযোগী খাদি গরাণ কাটা হয়। অতি উত্তম বৃদ্ধি প্রাপ্ত গরাণ গাছ ১র্৪-১র্৬ লম্বা হয়। লবণাক্ত এলাকায় গরাণ বেশি জন্মে। তাই সাতক্ষীরা রেঞ্জের সর্বত্র, খুলনা রেঞ্জের পশ্চিমাংশে এবং সমুদ্র উপকুলবর্তী এলাকায় বেশি গরাণ পাওয়া যায়। সুন্দরবনের উত্তর ও পুর্বাংশে মিঠা পানির অঞ্চল বিধায় গরাণ কম জন্মে। বাছাই ও খাদি গরাণ ছাড়াও আরেক ধরনের গরাণ আছে তাকে মাঠ গরাণ বলে। গরাণের ফুল আসে মার্চ-এপ্রিল মাসে এবং ফল পাকে মে-জুন মাসে। গরানের ফুল হতে মৌমাছিরা মধু সংগ্রহ করে এবং একে গরাণের মধু বলে। মান ও গুনের দিক দিয়ে গরাণের মধু চতুর্থ। গরাণ গাছে বেশি ডালপালা থাকলেও ডালপালাগুলো চিকন হলে সে গরাণকে ঝামটি গরাণ বলে। সুন্দরবনের যে অঞ্চলে গরাণ বেশি পাওয়া যায় সে অঞ্চলে মাটির উর্বরতা শক্তি কম বুঝতে হবে।

সুন্দরবনের ঝানা (গর্জন) গাছ :

ঝানা সুন্দরবনের সৌন্ধর্য্য বর্ধনকারী গাছ। ঝানার অপর নাম গর্জন। সুমদ্রের নিকটবর্তী বনাঞ্চলে গর্জন গাছ বেশি দেখা যায়। ঝানা খাল বা নদীর পাড়ে বেশি জন্মে। অনেক মূল গাছকে মাটির সাথে আটকিয়ে রাখে। খালের অথবা নদীর পাড়ে ঝানা বা গর্জন গাছের সারি দেখলে সত্যই অপুুর্ব লাগে। পাতা প্রাথমিক অবস্থায় বাইন পাতার মত দেখা যায়। পুর্বে ঝানা বেপরোয়া ভাবে জ্বালানীর জন্য কাটার ফলে এ গাছের প্রাপ্তি বর্তমানে সীমিত হয়েছে।

সুন্দরবনের সিংড়া গাছ :

সিংড়া সুন্দরবনের জ্বালানী গাছের মধ্যে অন্যতম। বনের অন্য গাছের নীচে প্রচুর পরিমানে জন্মায়। অধিক হারে কাটার ফলে সিংড়া প্রাপ্তি কমছে।

সুন্দরবনের গোলপাতা গাছ :

গোলপাতা সুন্দরবনের একটি অত্যন্ত সুপরিচিত গাছ। নাম গোলপাতা হলেও কিন্তু গাছের পাতা গোল নয়। আসলে গোলপাতা গাছের পাতা নারিকেল গাছের পাতার মত দেখায়। নদীর বা খালের পাড়ে অপুর্ব সুন্দর পরিবেশে গোলপাতা সারি সারি জন্মায়। গোলপাতা গাছের ফল গোল। তাই গোল ফল হতে গাছের নাম গোলপাতা হয়েছে। গোলপাতা অষ্ট্রেলিয়া, ভারত, বার্মা, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, শ্রীলংকা, পাপুয়া নিউগিনি ও বাংলাদেশের লোনা পানির বনে জন্মে থাকে। গোলপাতা গাছের কান্ড খুব ছোট, প্রায় ৭০ সেমি হবে। পাতা ৭ মিঃ লম্বা পর্যন্ত হয়। গোল গাছের ফুল আসে এপ্রিল-মে মাসে এবং ফল পাকে ডিসেম্বর-জানুয়ারী মাসে। জোয়ারের পানির সাথে ভেসে নদী বা খালের পাড়ে মাটিতে পড়ে গাছ হয়। তিন বছর বয়সে গোলপাতা গাছ ফুল ও ফল দিতে শুরু করে। ৫-৬ বছরে গাছ পরিপক্ক হয়। একটি সুস্থ ও সবল গাছ বছরে ৩-৫ টি পাতা দেয়। নতুন প্রতি গাছে ৭-৮ টি পাতা এবং পাতার গড় উচ্চতা ৫ ফুট হতে ৮ ফুট হয়। গোলপাতা ঘরের ছাউনী ও বেড়া তৈরীতে ব্যাপক হয়। গোলপাতার বৃন্ত জ্বালানী হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। গোলপাতার পুপ মঞ্জরী কেটে রস থেকে এলকোহল তৈরী করা যায়।

সুন্দরবনের মালিয়া ঘাস :

মালিয়া ঘাস সুন্দরবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অকাষ্ট বনজ সম্পদ। এ ঘাস নদী ও খালের পাড়ে বেলে দোয়াশ মাটিতে দলবদ্ধভাবে জন্মে। সুন্দরবন ভ্রমনের সময় খালের পাড়ে গাঢ় সবুজ মালিয়া ঘাস গাছের বন দেখলে নতুন অভিজ্ঞতা হয়। ৩-৪ ফুট লম্বা এ ঘাস খুবই সতেজ ও প্রান্ত বন্ত দেখায়। সুন্দরবনের ভিতরে একটানা বৃক্ষের মাঝে এ মালিয়া ঘাসের উপস্থিতি সত্যিই পরিবেশকে মনমুগ্ধ করে তুলে। ভ্রমনকারীদের এক ঘেয়েমি হঠাৎ করে কমে যায়। এ ঘাস দেখতে হোগলা পাতার মত। কিন্তু আকারে ছোট। বাওয়ালীরা মালিয়া ঘাস মে মাস হতে শুরু করে অক্টোবর পর্যন্ত আহরণ করে। চাঁদপাই ও শরনখোলা রেঞ্জে বেশি মালিয়া ঘাস পাওয়া যায়। সাতক্ষীরা রেঞ্জে মালিয়া ঘাস তুলনা মূলক কম পাওয়া যায়। পাশ গ্রহন করে বাওয়ালীরা মালিয়া ঘাস সংগ্রহ করে। কাঁচি, দাও সহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে। মালিয়া ঘাস সংগ্রহের নৌকাগুলো সাধারণতঃ ২০০-৩০০ মনের হয়। এতে ৯-১২ জন বাওয়ালী থাকে। সাধারনতঃ বাওয়ালীরা প্রথমে যে সব এলাকায় মালিয়া ঘাস জন্মে সে সব এলাকায় ভ্রমন করে কত ঘাস পাওয়া যাবে তা অনুমান করে। পরবর্তীতে সে মোতাবেক পারমিট নেয়। মালিয়া ঘাস ছোট ছোট মাদুর তৈরীতে ব্যবহৃত হয়। একটি মাদুর ৪ ফুট লম্বা হয়। এ সব মাদুর খেতে বসতে ও প্রার্থনার কাজে ব্যবহৃত হয়। মহিলারা তাদের কাজের ফাকে ফাকে মালিয়া ঘাস দিয়ে মাদুর তৈরী করে। আশাশুনি, পাইকগাছা, কয়রা, চালনা, মোড়েলগঞ্জে এ মালিয়া ঘাস দিয়ে মাদুর তৈরী করা হয়। সাতক্ষীরা জেলায় বড়দল বাজার সর্ববৃহৎ মাদুর বিক্রয় কেন্দ্র। সুন্দরবন থেকে মালিয়া ঘাস কেটে আনার পর বাড়িতে রোদে ৪/৫ দিন শুকানো হয়। তারপর একটি মালিয়া ঘাস দু’ অংশে বিভক্ত করা হয়। ১০-১৫ কেজি এক বান্ডেল মালিয়া ঘাস শুকালে প্রায় ৪ কেজি হয়। মেয়েরা মাদুর তৈরী করে।

চলবে

No comments:

Post a Comment

Follow Us @VisitSundaebon