মধুসংগ্রহঃ সুন্দরবনে মধু উৎপাদনকারী বিভিন্ন প্রজাতির গাছ প্রচুর পরিমানে বিদ্যমান। নির্দিষ্ট পরিমানে রাজস্ব প্রদান করে মধু সংগ্রহকারীরা বন বিভাগ হতে মধু সংগ্রহের অনুমতিপত্র গ্রহণ করে। প্রতি বছর ১ এপ্রিল হতে ১৫ জুন পর্যন্ত মধু সংগ্রহ করার অনুমতি পান। গড়ে প্রতি বছর সুন্দরবন হতে ১,৫০,০০০ কেজি মধু সংগৃহীত হয়। প্রায় তিন হাজার পরিবার সুন্দরবন হতে মধু ও মোম সংগ্রহের সাথে যুক্ত।
সুন্দরবনে ইকোট্যুরিজমঃ সুন্দরবনের অপুর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেশী-বিদেশী ও বিভিন্ন শ্রেণীর পর্যটকদের সবসময়ই বিমোহিত করে। এখানকার বৈচিত্র্যময় উদ্ভিদরাজি, বন্যপ্রাণী, অকৃত্রিম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের বার বার সুন্দরবন ভ্রমনে আকৃষ্ট করে। সুন্দরবনের অপার সৌন্দর্য অবলোকন, বন্যপ্রাণীর অবাধ বিচরণ ও তা পর্যবেক্ষণ করা সুন্দরবনে পর্যটকদের ভ্রমনের প্রধান উদ্দেশ্য। প্রাণী কুলের মধ্যে বিশ্ব বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রল হরিণ, বানর, কুমির, বন্যশুকর, কচ্ছপ,উদবিড়াল, গুইসাপ এবং বিভিন্ন প্রজাতির রং বেরং এর পাখি উল্লেখযোগ্য। সুন্দরবন ভ্রমনে যে ব্যাপারগুলো পর্যটকদেরকে প্রবলভাবে আকর্ষণ ও বেমোহিত করে তা হলো বনের অভ্যন্তরে সমুদ্র সৈকত, হরিনের পালে ইতস্তত বিচরণ, কর্দমাক্ত অথবা সমুদ্র সৈকতের বেলাভূমিতে বাঘের সদ্য পায়ের ছাপ, বানর দলের কিচিরমিচির শব্দে গাছের ডালে ডালে ছুটে চলা, উদবিড়ালের মাছ ধরা, শুকর দলের দলবেধে ঘুরে বেড়ানো এবং খাবারের সন্ধান করা, বক, মাছরাঙ্গা-চিলের মাছ ধরা, নৌকা ভ্রমণ, রাতের সুন্দরবনের নিস্তব্ধতা, দুবলার রাশমেলা, জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য প্রভৃতি। সুন্দরবনের আকর্ষণীয় স্থানগুলোর মধ্যে করমজল, কটকা, কচিখালী, নীলকল, দুবলার চর, শেখের টেক মন্দির, মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত, হারবাড়িয়া, দোবেকী, কালিরচর, মৃগামারীম সুপতি ইত্যাদি উল্লেখ্যযোগ্য।
পর্যটন কেন্দ্র করমজলঃ সুন্দরবনের আকর্ষণীয় বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রগুলির মধ্যে করমজল পর্যটন কেন্দ্রে প্রতিবছর সর্বাধিক সংখ্যক পর্যটক আসেন। খুলনা শহর হতে ৫০ কিঃমিঃ এবং মংলা সমুদ্র বন্দর হতে মাত্র ৫ কিঃমিঃ দুরে পশুর নদীর তীরে ৩০.০ হেক্টর আয়তনের আকর্ষণীয় এই পর্যটন কেন্দ্রটি সুন্দরবন পুর্ব বন বিভাগের অন্তর্গত চাঁদপাই রেঞ্জের অধিক্ষেত্রাধীন এলাকা গড়ে তোলা হয়েছে। মংলা হতে করমজল লঞ্চ/ ট্রলারে মাত্র ৪৫ মিনিটের পথ হওয়ায় দিনে যেয়ে দিনে ফিরে আসার সুবিধা এবং ভ্রমনে তুলনামূলক কম খরচের কারনে অধিকাংশ পর্যটকেরই সুন্দরবন ভ্রমণে প্রথম পছন্দের স্থান করমজল। পর্যটকদের জন্য সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হলো বিকেলে করমজল এলাকায় দল বেধে বন্য চিত্রল হরিণের আগমন এবং পর্যটকদের হাত থেকে খাবার গ্রহন। করমজল গিয়ে পর্যটকগন সহজেই সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ইকোসিষ্টেম সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারেন এবং সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ধিদ ও বন্য প্রাণীর সাথে পরিচিত হতে পারেন। পরিচিতির সুবিধার্থে এখানে বিদ্যমান গাছের সাথে নামফলক যুক্ত করে রাখা আছে। এছাড়া পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য এখানে বনের ভিতর দিয়ে ৭২১ ফুট দীর্ঘ কাঠের তৈরী পথ, ১০ মিঃ উচ্চ পর্যবেক্ষন টাওয়ার, গোলঘর, কুমির প্রজনন ও পালন কেন্দ্র, হরিণ প্রজনন ও পালন কেন্দ্র, বানর প্রজনন ও পালন কেন্দ্র বিদ্যমান। অসংখ্য শ্বাসমূল আর জোয়ারের পানির কারনে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে পায়ে হেঁটে চলা খুবই কষ্টকর,্ তাই দীর্ঘ কাঠের তৈরী পথ পর্যটকদের বনাভ্যন্তরের পরিবেশ উপভোগের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। আঁকা-বাকা পথে কাঠের পথ নির্মান করে বনাভ্যন্তরের গাছগুলোকে সযতেœ সংরক্ষন করার বিষয়টিও সবার দৃষ্টি কাড়ে। এছাড়া মিষ্টি পানির জন্য এখানে তিনটি পুকুর রয়েছে, যা থেকে পর্যটকগন পানি পান করে থাকেন।ভবিষ্যৎ পর্যটকদের জন্য অধিক পরিমাণ সুযোগ সুবিধা সৃষ্টির মাধ্যমে অধিক সংখ্যক পর্যটকদেরকে আকৃষ্ট করা, সুন্দরবনের জীব বৈচিত্র্যে সংরক্ষন ও গবেষনার জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা সৃষ্টির লক্ষে সরকারী পর্যায়ে চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে। করমজল দর্শনের জন্য কোন অনুমতির প্রয়োজন হয় না। তবে নির্দিষ্ট হারে রাজস্ব প্রদানের রীতি আছে। করমজলে পর্যটকদের আগমন দিন দিন বেড়েই চলেছে। সরকারী ছুটির দিন, ধর্মীয় উৎসবে এখানে দর্শক সমাগম বৃদ্ধি পায়।
পর্যটন স্থান কটকাঃ সুন্দরবণ পুর্ব অভয়ারন্যের পশ্চিমাংশে সাগরতীরে অবস্থিত কটকা অভয়ারণ্য কেন্দ্র। এই টটি সুন্দরবনের একেবারে দক্ষিণ অংশে, সাগরের কোল ঘেষে অবস্থিত। এখানকার নৈসর্গিক পরিবেশ দেশী বিদেশী পর্যটকদের প্রধানতম আকর্ষণ। কটকাস্থ ঘন বনানীর ছায়ায় নির্মিত বিশ্রামাগারের বারান্দায় বসে চোখের সামনে আছড়ে পড়া উত্তাল সমুদ্রের ঢেউ একান্তই উপভোগ্য। বিকালে বিশ্রামাগারের চারিপাশে হাজার হাজার বন্য হরিনের ছুটোছুটি, বানরের কোলাহল,শুকোর, বন মোরগ, মদনটেক, বক এর বিচরণ এবং ভোরে নদীর পাড়ে কুমিরের রোদ পোহানোর দৃশ্য দর্শনার্থীদের মন কাড়ে। কটকা স্থানটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার এর জন্য অবারিত বিচরণ ক্ষেত্র। এখানে দর্শনার্থী অধিক সংখ্যক বাঘের বিচরণ প্রত্যক্ষ করতে পারেন। বন বিভাগ এখানে তন্ময় নামক একটি পর্যবেক্ষন টাওয়ার নির্মান করেছে যার চুড়ায় আরোহন করে বাঘ, বানর, শুকোর এবং হরিনের অবারিত বিচরণ প্রত্যক্ষ করে অনাবিল আনন্দ পাওয়া যায়। পড়ন্ত বিকেলে অথবা সকালে এখানে খালের পাড়ে দলবদ্ধভাবে চিত্রা হরিণ বিচরণ করে। ওরা খাবারের সন্ধানে এদিক ওদিক ছুটা ছুটি করে। মানুষ দেখলে চেয়ে থাকে, মনে হয় যেন কিছু একটা বলবে। কত মায়া লাগে ওদের দেখলে। অনেক সময় ভয়ে ওরা বনের ভিতর দৌড়ে পালিয়ে যায়। অনেক সময় লাফিয়ে কেওড়া গাছের পাতা খেতে দেখা যায়। কটকাস্থ ঘন বনানীর ছায়ায় নির্মিত বিশ্রামাগারে ৪টি শয্যা বিশিষ্ট ২টি কক্ষ ও ১টি ডাইনিং রুম রয়েছে। বরাদ্দ প্রাপ্তি ও নির্ধারিত রাজস্ব আদায় সাপেক্ষে এই বিশ্রামাগার ব্যবহার করা যায়। এখানে ৬০ ফুট লম্বা সুন্দরী কাঠের জেটি আছে। একে ভ্রমনকারীদের বসার জন্য টেবিল চেয়ার আছে। প্রকৃতি পিপাসুরা ছায়ান্নে এখানে বসে বঙ্গোপসাগরের শীতল হাওয়া এবং সুন্দরবন এর নৈসর্গিক দৃশ্য উপভোগ করে। জেটি হতে অফিস ও বিশ্রামাগার পর্যন্ত ১০০ ফুট দীর্ঘ একটি পাকা সড়ক আছে। এর দুই পাশে নারিকেল ও ঝাউগাছ রাস্তাটিকে একটি জীবন্ত ট্যানেলে পরিণত করে মনোরম করে তুলেছে। কটকা নদী প্রায় আট কিঃ মিঃ লম্বা। মনোরম দৃশ্য উপভোগ, বন্য প্রাণী পর্যবেক্ষন এবং মনের আনন্দে ঘুরে বেড়ানোর জন্য কটকা সুন্দরবনের একটি আকর্ষণীয় স্থান। ছোট ছোট দাঁড়ের নৌকা দিয়ে ভ্রমন করে প্রকুতিকে একেবারে কাছ থেকে দেখার ও উপভোগ করার মত যথেষ্ট সুযোগ আছে কটকায়। কটকা এর দুরত্ব মংলা হতে প্রায় ১১২ কিঃমিঃ। সম্প্রতি কটকা যাবার জন্য মংলা বিভিন্ন ধরনের জলযান ভাড়া হিসেবে পাওয়া যায় মংলা হতে একটি লঞ্চ বা ট্রলার যোগে কটকা যেতে সময় লাগে প্রায় ৮ ঘন্টা থেকে ১০ ঘন্টা। কটকা বেড়াতে যাবার জন্য অক্টোবর থেকে ফেব্র“য়ারী এ ৪ মাস উত্তম সময়। অবশ্য সুন্দরবনের সুন্দরতম এ স্থান ভ্রমনের জন্য বিভিন্ন ট্যুর অপারেটর বিশেষ ব্যবস্থার প্রচলন করেছেন।
পর্যটন স্থান জামতলাঃ কটকা কেন্দ্রের নিকটবর্তী একটি অন্যতম আকর্ষণীয় স্পট জামতলা। কটকা খাল পার হয়ে ছোট একটি খালের পাড়েই এর অবস্থান। জামগাছের আধিক্য এখানকার একটি বৈশিষ্ট। জামতলা একটি বিস্তীর্ন খোলা এলাকা যাকে আড়াল করে রেখেছে চারিধারের সারিবদ্ধ বৃক্ষরাজি ও ঝোপঝাড়। পর্যটকদের আকর্ষনের জন্য এখানে একটি ওয়াইল্ড লাইফ ওয়াচ টাওয়ার নির্মিত হয়েছে। টাওয়ারে ওপর থেকে বিস্তীর্ন সনক্ষেতে হরিনের ছোটাছুটি, আর হঠাৎ থমকে গিয়ে অবাক চোখে চেয়ে থাকার দৃশ্য পর্যটকদের অস্থির করে, তারা জঙ্গলের আড়াল থেকে ভেসে আসা সমুদ্রের শো শো গর্জন শুনে ভীরু পায়ে এগিয়ে যায় অজানার সন্ধানে, তাদের প্রচন্ড কৌতুহল মেশানো উৎকণ্ঠা হার মানায়- শিহরণ জাগানো ঝোপ ঝাড় আর হিংস্র বাঘের আতংক। পর্যটকরা ছুটে গিয়ে আবিস্কার করে ব্যতিক্রমী এক সমুদ্র সৈকত। বনেন সান্নিধ্যে সাগর এখানে দুষণ মুক্ত, বিশাল অথচ নির্জন। জামতলার সনক্ষেতের পাশাপাশি রয়েছে টাইগার ফার্ন আর হুদো বনের আধিক্য যা- সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার দের লুকিয়ে থাকার একটি আদর্শ স্থান। রয়েল বেঙ্গল টাইগার নিজেকে আড়াল করে পর্যটকদের মজা দেখতেই বেশী আগ্রহী এবং সুযোগ বুঝে শিকারীর ওপর ব্যর্থহীন আক্রমনে তাদের জুড়ি মেলা ভার। তবে এতদাঞ্চলে যথেষ্ট সংখ্যক হরিনের উপস্থিতি বাঘের মানুষ আক্রমনের সম্ভাবনা হয়তঃ কিছুটা কমিয়ে দিয়ে থাকবে। এখানে জামতলা খালটি প্রায় ১ কিঃমিঃ লম্বা। তাতে কান্ট্রি বোটে চড়ে উপভোগ করা যায়।
-চলবে
সুন্দরবনে ইকোট্যুরিজমঃ সুন্দরবনের অপুর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেশী-বিদেশী ও বিভিন্ন শ্রেণীর পর্যটকদের সবসময়ই বিমোহিত করে। এখানকার বৈচিত্র্যময় উদ্ভিদরাজি, বন্যপ্রাণী, অকৃত্রিম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের বার বার সুন্দরবন ভ্রমনে আকৃষ্ট করে। সুন্দরবনের অপার সৌন্দর্য অবলোকন, বন্যপ্রাণীর অবাধ বিচরণ ও তা পর্যবেক্ষণ করা সুন্দরবনে পর্যটকদের ভ্রমনের প্রধান উদ্দেশ্য। প্রাণী কুলের মধ্যে বিশ্ব বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রল হরিণ, বানর, কুমির, বন্যশুকর, কচ্ছপ,উদবিড়াল, গুইসাপ এবং বিভিন্ন প্রজাতির রং বেরং এর পাখি উল্লেখযোগ্য। সুন্দরবন ভ্রমনে যে ব্যাপারগুলো পর্যটকদেরকে প্রবলভাবে আকর্ষণ ও বেমোহিত করে তা হলো বনের অভ্যন্তরে সমুদ্র সৈকত, হরিনের পালে ইতস্তত বিচরণ, কর্দমাক্ত অথবা সমুদ্র সৈকতের বেলাভূমিতে বাঘের সদ্য পায়ের ছাপ, বানর দলের কিচিরমিচির শব্দে গাছের ডালে ডালে ছুটে চলা, উদবিড়ালের মাছ ধরা, শুকর দলের দলবেধে ঘুরে বেড়ানো এবং খাবারের সন্ধান করা, বক, মাছরাঙ্গা-চিলের মাছ ধরা, নৌকা ভ্রমণ, রাতের সুন্দরবনের নিস্তব্ধতা, দুবলার রাশমেলা, জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য প্রভৃতি। সুন্দরবনের আকর্ষণীয় স্থানগুলোর মধ্যে করমজল, কটকা, কচিখালী, নীলকল, দুবলার চর, শেখের টেক মন্দির, মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত, হারবাড়িয়া, দোবেকী, কালিরচর, মৃগামারীম সুপতি ইত্যাদি উল্লেখ্যযোগ্য।
পর্যটন কেন্দ্র করমজলঃ সুন্দরবনের আকর্ষণীয় বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রগুলির মধ্যে করমজল পর্যটন কেন্দ্রে প্রতিবছর সর্বাধিক সংখ্যক পর্যটক আসেন। খুলনা শহর হতে ৫০ কিঃমিঃ এবং মংলা সমুদ্র বন্দর হতে মাত্র ৫ কিঃমিঃ দুরে পশুর নদীর তীরে ৩০.০ হেক্টর আয়তনের আকর্ষণীয় এই পর্যটন কেন্দ্রটি সুন্দরবন পুর্ব বন বিভাগের অন্তর্গত চাঁদপাই রেঞ্জের অধিক্ষেত্রাধীন এলাকা গড়ে তোলা হয়েছে। মংলা হতে করমজল লঞ্চ/ ট্রলারে মাত্র ৪৫ মিনিটের পথ হওয়ায় দিনে যেয়ে দিনে ফিরে আসার সুবিধা এবং ভ্রমনে তুলনামূলক কম খরচের কারনে অধিকাংশ পর্যটকেরই সুন্দরবন ভ্রমণে প্রথম পছন্দের স্থান করমজল। পর্যটকদের জন্য সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হলো বিকেলে করমজল এলাকায় দল বেধে বন্য চিত্রল হরিণের আগমন এবং পর্যটকদের হাত থেকে খাবার গ্রহন। করমজল গিয়ে পর্যটকগন সহজেই সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ইকোসিষ্টেম সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারেন এবং সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ধিদ ও বন্য প্রাণীর সাথে পরিচিত হতে পারেন। পরিচিতির সুবিধার্থে এখানে বিদ্যমান গাছের সাথে নামফলক যুক্ত করে রাখা আছে। এছাড়া পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য এখানে বনের ভিতর দিয়ে ৭২১ ফুট দীর্ঘ কাঠের তৈরী পথ, ১০ মিঃ উচ্চ পর্যবেক্ষন টাওয়ার, গোলঘর, কুমির প্রজনন ও পালন কেন্দ্র, হরিণ প্রজনন ও পালন কেন্দ্র, বানর প্রজনন ও পালন কেন্দ্র বিদ্যমান। অসংখ্য শ্বাসমূল আর জোয়ারের পানির কারনে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে পায়ে হেঁটে চলা খুবই কষ্টকর,্ তাই দীর্ঘ কাঠের তৈরী পথ পর্যটকদের বনাভ্যন্তরের পরিবেশ উপভোগের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। আঁকা-বাকা পথে কাঠের পথ নির্মান করে বনাভ্যন্তরের গাছগুলোকে সযতেœ সংরক্ষন করার বিষয়টিও সবার দৃষ্টি কাড়ে। এছাড়া মিষ্টি পানির জন্য এখানে তিনটি পুকুর রয়েছে, যা থেকে পর্যটকগন পানি পান করে থাকেন।ভবিষ্যৎ পর্যটকদের জন্য অধিক পরিমাণ সুযোগ সুবিধা সৃষ্টির মাধ্যমে অধিক সংখ্যক পর্যটকদেরকে আকৃষ্ট করা, সুন্দরবনের জীব বৈচিত্র্যে সংরক্ষন ও গবেষনার জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা সৃষ্টির লক্ষে সরকারী পর্যায়ে চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে। করমজল দর্শনের জন্য কোন অনুমতির প্রয়োজন হয় না। তবে নির্দিষ্ট হারে রাজস্ব প্রদানের রীতি আছে। করমজলে পর্যটকদের আগমন দিন দিন বেড়েই চলেছে। সরকারী ছুটির দিন, ধর্মীয় উৎসবে এখানে দর্শক সমাগম বৃদ্ধি পায়।
পর্যটন স্থান কটকাঃ সুন্দরবণ পুর্ব অভয়ারন্যের পশ্চিমাংশে সাগরতীরে অবস্থিত কটকা অভয়ারণ্য কেন্দ্র। এই টটি সুন্দরবনের একেবারে দক্ষিণ অংশে, সাগরের কোল ঘেষে অবস্থিত। এখানকার নৈসর্গিক পরিবেশ দেশী বিদেশী পর্যটকদের প্রধানতম আকর্ষণ। কটকাস্থ ঘন বনানীর ছায়ায় নির্মিত বিশ্রামাগারের বারান্দায় বসে চোখের সামনে আছড়ে পড়া উত্তাল সমুদ্রের ঢেউ একান্তই উপভোগ্য। বিকালে বিশ্রামাগারের চারিপাশে হাজার হাজার বন্য হরিনের ছুটোছুটি, বানরের কোলাহল,শুকোর, বন মোরগ, মদনটেক, বক এর বিচরণ এবং ভোরে নদীর পাড়ে কুমিরের রোদ পোহানোর দৃশ্য দর্শনার্থীদের মন কাড়ে। কটকা স্থানটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার এর জন্য অবারিত বিচরণ ক্ষেত্র। এখানে দর্শনার্থী অধিক সংখ্যক বাঘের বিচরণ প্রত্যক্ষ করতে পারেন। বন বিভাগ এখানে তন্ময় নামক একটি পর্যবেক্ষন টাওয়ার নির্মান করেছে যার চুড়ায় আরোহন করে বাঘ, বানর, শুকোর এবং হরিনের অবারিত বিচরণ প্রত্যক্ষ করে অনাবিল আনন্দ পাওয়া যায়। পড়ন্ত বিকেলে অথবা সকালে এখানে খালের পাড়ে দলবদ্ধভাবে চিত্রা হরিণ বিচরণ করে। ওরা খাবারের সন্ধানে এদিক ওদিক ছুটা ছুটি করে। মানুষ দেখলে চেয়ে থাকে, মনে হয় যেন কিছু একটা বলবে। কত মায়া লাগে ওদের দেখলে। অনেক সময় ভয়ে ওরা বনের ভিতর দৌড়ে পালিয়ে যায়। অনেক সময় লাফিয়ে কেওড়া গাছের পাতা খেতে দেখা যায়। কটকাস্থ ঘন বনানীর ছায়ায় নির্মিত বিশ্রামাগারে ৪টি শয্যা বিশিষ্ট ২টি কক্ষ ও ১টি ডাইনিং রুম রয়েছে। বরাদ্দ প্রাপ্তি ও নির্ধারিত রাজস্ব আদায় সাপেক্ষে এই বিশ্রামাগার ব্যবহার করা যায়। এখানে ৬০ ফুট লম্বা সুন্দরী কাঠের জেটি আছে। একে ভ্রমনকারীদের বসার জন্য টেবিল চেয়ার আছে। প্রকৃতি পিপাসুরা ছায়ান্নে এখানে বসে বঙ্গোপসাগরের শীতল হাওয়া এবং সুন্দরবন এর নৈসর্গিক দৃশ্য উপভোগ করে। জেটি হতে অফিস ও বিশ্রামাগার পর্যন্ত ১০০ ফুট দীর্ঘ একটি পাকা সড়ক আছে। এর দুই পাশে নারিকেল ও ঝাউগাছ রাস্তাটিকে একটি জীবন্ত ট্যানেলে পরিণত করে মনোরম করে তুলেছে। কটকা নদী প্রায় আট কিঃ মিঃ লম্বা। মনোরম দৃশ্য উপভোগ, বন্য প্রাণী পর্যবেক্ষন এবং মনের আনন্দে ঘুরে বেড়ানোর জন্য কটকা সুন্দরবনের একটি আকর্ষণীয় স্থান। ছোট ছোট দাঁড়ের নৌকা দিয়ে ভ্রমন করে প্রকুতিকে একেবারে কাছ থেকে দেখার ও উপভোগ করার মত যথেষ্ট সুযোগ আছে কটকায়। কটকা এর দুরত্ব মংলা হতে প্রায় ১১২ কিঃমিঃ। সম্প্রতি কটকা যাবার জন্য মংলা বিভিন্ন ধরনের জলযান ভাড়া হিসেবে পাওয়া যায় মংলা হতে একটি লঞ্চ বা ট্রলার যোগে কটকা যেতে সময় লাগে প্রায় ৮ ঘন্টা থেকে ১০ ঘন্টা। কটকা বেড়াতে যাবার জন্য অক্টোবর থেকে ফেব্র“য়ারী এ ৪ মাস উত্তম সময়। অবশ্য সুন্দরবনের সুন্দরতম এ স্থান ভ্রমনের জন্য বিভিন্ন ট্যুর অপারেটর বিশেষ ব্যবস্থার প্রচলন করেছেন।
পর্যটন স্থান জামতলাঃ কটকা কেন্দ্রের নিকটবর্তী একটি অন্যতম আকর্ষণীয় স্পট জামতলা। কটকা খাল পার হয়ে ছোট একটি খালের পাড়েই এর অবস্থান। জামগাছের আধিক্য এখানকার একটি বৈশিষ্ট। জামতলা একটি বিস্তীর্ন খোলা এলাকা যাকে আড়াল করে রেখেছে চারিধারের সারিবদ্ধ বৃক্ষরাজি ও ঝোপঝাড়। পর্যটকদের আকর্ষনের জন্য এখানে একটি ওয়াইল্ড লাইফ ওয়াচ টাওয়ার নির্মিত হয়েছে। টাওয়ারে ওপর থেকে বিস্তীর্ন সনক্ষেতে হরিনের ছোটাছুটি, আর হঠাৎ থমকে গিয়ে অবাক চোখে চেয়ে থাকার দৃশ্য পর্যটকদের অস্থির করে, তারা জঙ্গলের আড়াল থেকে ভেসে আসা সমুদ্রের শো শো গর্জন শুনে ভীরু পায়ে এগিয়ে যায় অজানার সন্ধানে, তাদের প্রচন্ড কৌতুহল মেশানো উৎকণ্ঠা হার মানায়- শিহরণ জাগানো ঝোপ ঝাড় আর হিংস্র বাঘের আতংক। পর্যটকরা ছুটে গিয়ে আবিস্কার করে ব্যতিক্রমী এক সমুদ্র সৈকত। বনেন সান্নিধ্যে সাগর এখানে দুষণ মুক্ত, বিশাল অথচ নির্জন। জামতলার সনক্ষেতের পাশাপাশি রয়েছে টাইগার ফার্ন আর হুদো বনের আধিক্য যা- সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার দের লুকিয়ে থাকার একটি আদর্শ স্থান। রয়েল বেঙ্গল টাইগার নিজেকে আড়াল করে পর্যটকদের মজা দেখতেই বেশী আগ্রহী এবং সুযোগ বুঝে শিকারীর ওপর ব্যর্থহীন আক্রমনে তাদের জুড়ি মেলা ভার। তবে এতদাঞ্চলে যথেষ্ট সংখ্যক হরিনের উপস্থিতি বাঘের মানুষ আক্রমনের সম্ভাবনা হয়তঃ কিছুটা কমিয়ে দিয়ে থাকবে। এখানে জামতলা খালটি প্রায় ১ কিঃমিঃ লম্বা। তাতে কান্ট্রি বোটে চড়ে উপভোগ করা যায়।
-চলবে
No comments:
Post a Comment