Monday, April 30, 2018

সুন্দরবন হবে আরো সুন্দর!

সুন্দরবন হবে আরো সুন্দর!
সুন্দরবন নিয়ে বিস্তর কথা হচ্ছে, লেখালেখি হচ্ছে। সেটা দীর্ঘদিন ধরেই। সুন্দরবনের পাশে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে সবারই সুন্দর সুন্দর কথা বলার কথা ছিল। কিন্তু সবাই সুন্দরবন নিয়ে বেশি বেশি অসুন্দর কথা বলছেন। এটা মোটেও ঠিক নয়।
এক্ষেত্রে একমাত্র দায়িত্ব নিয়ে সুন্দর সুন্দর কথা বলার কাজটি করে চলেছে সরকার ও তার দায়িত্বশীল মন্ত্রণালয়। শুধু তাই নয়, সুন্দরবনকে সুন্দর করার যতো আয়োজন বর্তমান সরকারই সেটা নিজ দায়িত্বেই করে চলেছে। দেশের গণমাধ্যমও ‘সুন্দরবন ধ্বংস! সুন্দরবন ধ্বংস’ এসব না বলে চুপ থেকে চরম দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিচ্ছে।
সারাদেশের মতো সুন্দরবনেও বিদ্যুৎ সরবরাহ সময়ের দাবি। শুধু মানুষই বিদ্যুতের আলোয় থাকবে, এটা ঠিক নয়। বনের পশুপাখিরও আছে বন আলোকিত করে রাতের আঁধার কাটানোর অধিকার। এটা একটা যুক্তি। আবার অনেকে বলছেন, মাত্র ৯-১০ কিলোমিটার দূরত্বের রামপালে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র খুব বেশি কাছে হয়ে যায়। এটা বনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এটা প্রতিবেশ ঝুঁকিতে ফেলবে বন ও তার জীবজন্তু ও প্রাণীদেরকে। এক পর্যায়ে খাদ্যশৃঙ্খল নষ্ট হয়ে বন ও তার বাসিন্দারা ধ্বংস হয়ে যাবে।
বলি, একটি দেশের জন্য বনজঙ্গলের দরকারটাইবা কি? বনজঙ্গলে কি হয়? আমরা প্রাচীন ইতিহাসে পড়েছি, মানুষ উল্টো বনজঙ্গল কেটে মানব বসতি গড়ে সভ্যতা বিনির্মান করেছে। সুন্দরবনে মানববসতি গড়ে তোলা সময়ের দাবি। কয়েকদিন আগেই ঘোষণা হলো, দেশের জনসংখ্যা এখন নাকি ষোলো কোটি হয়েছে। এই ষোলো কোটি মানুষের দেশে বন উজাড় করে বসতি গড়ার দরকার আছে। এতো মানুষের জন্য আবাসন একটা বড় সমস্যা।
সুন্দরবন সাফ করে এর প্রক্রিয়া শুরু করা যেতে পারে। এ জন্য বনের বাসিন্দাদের উচ্ছেদ প্রয়োজন। কিন্তু হুটহাট করে বনের বাঘ, মোষ, সাপ, ব্যাঙ, কুমির, গুইসাপ, হরিণদেরকে উচ্ছেদ করলে বড়ই অমানবিক দেখায় বিষয়টা। আপনারা দেখেছেন, শহরের বস্তি উচ্ছেদ করলে তার বাসিন্দাদের কি দুর্দশাটাই না হয়। এক্ষেত্রে সুন্দরবনের ব্যাপারে দুর্দান্ত দূরদর্শী এক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র হলো সেই আধুনিক পদ্ধতি। এর বাসিন্দারা বসতিচ্যূত হবেন আগামি ৪০ বা ৫০ বছরে ধীরে ধীরে। সুন্দর এক উচ্ছেদ ব্যবস্থা।   
সরকারের পরিবেশ সমীক্ষা অনুযায়ী, রামপাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হলে প্রতিদিন ১৪২ টন বিষাক্ত সালফার ডাই অক্সাইড, ৮৫ টন বিষাক্ত নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড নির্গত হবে। বছরে ৯ লাখ টন অত্যন্ত ক্ষতিকর বিষাক্ত ছাই বাতাসে মিশবে। কয়লাবিদ্যুৎ প্লান্টের জন্য রামপালের পাশের পশুর নদী থেকে পানি তুলতে হবে, গরম পানি ফেলতে হবে।
হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন। এভাবেই নদীর পানি, জলজ জীববৈচিত্র্যের গোষ্ঠি নিপাত হবে। এভাবেই ওই এলাকা মানুষের বসবাসের উপযোগি করা হবে।
বিদ্যুতও পেলাম, সুন্দরবন থেকে ক্ষতিকর ও ভয়ানক সব জীবজন্তুর হাত থেকে মানবজাতি বিশেষ করে উপকূলীয় লোকজনকেও রক্ষা করলাম, এরকম একটা সুন্দর প্রকল্পের বিরোধিতা করা শুধু দেশদ্রোহীতাই নয়, রীতিমত মীরজাফরিও বটে। বাংলাদেশের মিডিয়া এ ক্ষেত্রে ভীষণ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিচ্ছে। তারা অর্জুন রামপালদের নিয়ে যতো নিউজ প্রকাশ করছে এখন, তারচে কম প্রকাশ করছে সুন্দরবনের রামপাল প্রকল্প নিয়ে খবর। এখানেই দায়িত্বশীলতার বড় পরিচয়।
এই বাংলাদেশের বাইরে অন্য কোনোদেশে এই রামপাল প্রকল্প হলে দেখা যেতো মিডিয়া প্রতিদিনই ‘রামপাল রামপাল করে’ মাথা নষ্ট করে ফেলতো। সাপ-ব্যাঙ-কুমির-বাঘের অভয়ারণ্যের জন্য তারা ঘুম হারাম করে ফেলত। কিন্তু আমাদের মিডিয়া এটা সুন্দরভাবে বুঝতে পেরেছে। তাই তারা ক্ষতিকর বাঘ-কুমির, সাপ-ব্যাঙ-গুইসাপদের পক্ষে নেই।
উল্লেখ্য, ২০০ বছর আগেও সুন্দরবনের মোট আয়তন ছিল প্রায় ১৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার। বর্তমানে সমাজহিতৈষী নানা সরকার ও স্থানীয় প্রভাবশালী ভাল মানুষদের তৎপরতায় এটা দাঁড়িয়েছে এখন ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটারে। আগামি ৫০ বছরে এটিকে ঐতিহাসিক ৭১ বর্গ কিলোমিটারে নিয়ে আসা হবে। তখন সুন্দরবন হয়ে যাবে কিউট সাইজের এক সাফারি পার্ক।
যেহেতু আধুনিক মানুষদের কাছে বনের চেয়ে সাফারি পার্কের কদর বেশি, ফলে দেশের লোকজন তখন সুন্দরবন সাফারি পার্কের ভেতর দিয়ে গিয়ে একেবারে সমুদ্রের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে সাগরের সাথে সেলফি তুলতে পারবেন। নয়নাভিরাম সূর্যাস্ত দৃশ্য দেখে তখন বলে উঠতে পারবেন, ‘ওয়াও! বহুত আচ্ছা হ্যায়। কুল হ্যায়।’
লুৎফর রহমান হিমেল : সাংবাদিক, কলামিস্ট। বার্তা সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।

No comments:

Post a Comment

Follow Us @VisitSundaebon