কিভাবে সুন্দরবন পৌছবেনঃ আপনি দেশে বা দেশের বাইরে যেখানেই থাকুন না কেন আমরা (ভিজিট সুন্দরবন) আপনাকে সুন্দরবনে ভ্রমনের সব ব্যবস্থাই করবে। আপনাকে আপনার ভ্রমনের তারিখ ও সময়সূচী, লোকসংখ্যা এবং যদি বিশেষ কোন সেবা উপভোগ করতে চান তা উল্লেখ করে তাদের সাথে যোগাযোগ করলে সব ব্যবস্থাই তারা করে দেবেন। সুন্দরবন একটি সরক্ষিত বনাঞ্চল। এখানে ভ্রমনের জন্য কর্তৃপক্ষের (বন বিভাগ) এর পুর্বানুমতি নিতে হয়। সুন্দরবন ট্র্যরস এন্ড ট্রাভেলস আপনার জন্য সে ব্যবস্থা করে রাখবে। আপনি যদি ঢাকা থেকে আসতে চান সে ক্ষেত্রে তারা আপনাকে ঢাকা থেকে নিয়ে আসা ও ঢাকায় পৌছে দেয়ার ব্যবস্থা করবে। আপনি ইচ্ছা করলে যশোর বিমান বন্দর হয়ে খুলনায় এসেও তাদের অতিথি হতে পারেন। সর্বক্ষেত্রেই তাদের নিজস্ব পরিবহনে আপনাকে নিয়ে সুন্দরবন ভ্রমনের জন্য নির্ধারিত জলযানে পৌছে দেবেন। তাদের জলযান আপনার ইচ্ছা ও সুবিধা অনুযায়ী খুলনা অথবা মংলা থেকে ছেড়ে যেতে পারে।
সুন্দরবন নিঃসন্দেহে ঝুকিপূর্ণ। কিন্তু আপনার উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছুই নেই। কারণ বন বিভাগের নিরাপত্তা কর্মী সহ ১৭টি ট্রলার আর ৪টি ক্রুজার সর্বক্ষন নিরাপত্তার নিশ্চিত করার জন্য টহলরত। এছাড়া তাদের প্রতিটি জলযানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বন বিভাগের সসস্ত্র নিরাপত্তার কর্মী আপনাদের নিরাপত্তার জন্য নিয়োজিত থাকবে। তারা আপনাদের সর্বোত্তম নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আপনাদের আরামদায়ক ও আনন্দময় ভ্রমনের নিশ্চয়তা দেবেন।
সুন্দরবন সারাবছরই মনোরম ও উপভোগ্য। তবে অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত সময় সুন্দরবন দর্শনের জন্য সর্বোত্তম। কারণ এ সময় প্রকৃতি এবং নদী সমুহ শান্ত থাকে। বর্ষা মৌসুমে সাগর এবং নদী সমুহ থাকে অশান্ত ও বিপদ সঙ্কুল। এছ্ড়াা ঐতিহ্যবাহী রাশমেলা সুন্দরবনে উৎযাপিত হয় অক্টোবর বা নভেম্বরের পুর্নিমার তিথিতে। সুন্দরবন ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস এর রয়েছে নিজস্ব অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ও শিক্ষিত গাইড যারা সর্বক্ষন আপনাদের সাথে থেকে আপনাদের-কে সহযোগীতা ও পরামর্শ প্রদান করবে। ভ্রমনকালীন সময়ে তারা আপনাদের জন্য নিম্নরূপ খাবারের ব্যবস্থা করবেঃ- সকালের নাস্তা- পাউরুটি, মাখন, টোষ্ট, ডিম, জ্যাম, জেলি, সবজি, পরাটা, ফল , চা/কফি। সকালের চা ঃ সিঙ্গাড়া, নুডলস, চপ, চা/কফি। দুপুরের খাবার- সাদা ভাত, পোলাও, ভুনা খিচুড়ি, সবজি, মাছ, মাংস, ডিম, ডাল, সালাত, পানীয়। সান্ধ্যকালীন চাঃ বিস্কুট, চানাচুর, মিষ্টি, ফল, চা/কফি। রাতের খাবার- সাদা ভাত, ভুনা খিচুড়ি, সবজি, মাছ, মাংস, ডিম, ডাল, সালাদ, পানীয়। বিঃদ্রঃ চাইনিজ খাবার, থাই খাবার, ইংলিশ খাবার ইত্যাদির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তবে এ বিষয়ে তাদের-কে পুর্বেই অবহিত করতে হবে।
যে সমস্ত জিনিসপত্র আপনি সংগে নিতে পারবেনঃ পরিধেয় প্রয়োজনীয় সংখ্যক পোষাক, কেডস, ক্যাপ, সানগ্লাস, অসুস্থ থাকলে প্রয়োজনীয় ঔষধ, ক্যামেরা, বাইনোকিউলার, খেলাধুলার জন্য তাস বা দাবা, পড়াশুনার জন্য বইপত্র, পত্রিকা।
সতর্কতাঃ কোন উদ্ভিদ বা প্রাণী মেরে ফেলা, অঙ্গহানি করা বা সংগ্রহ করা যাবে না। উদ্ভিদ বা প্রাণী বেচাকেনা করা নিষিদ্ধ। প্রানীদের উত্তাক্ত না করে ছবি তোলা যাবে। ব্যবহুত খালি ব্যাগ/আবর্জনা যেখানে সেখানে নিক্ষেপ করা নিষিদ্ধ। যথা সম্ভব নিরাবতা বজায় রাখতে হবে। দল ত্যাগ করে একাকী কোথাও যাওয়া যাবে না। পথ হারিয়ে ফেললে সমস্যায় পড়তে হতে পারে।
লঞ্চে করে সুন্দরবণ পৌছানোর পর নৌকা ভ্রমনঃ সমগ্র সুন্দরবনের প্রায় ৩১ ভাগ এলাকা জুড়ে রয়েছে বিশাল জলভাগ। এই বিশাল জলভাগ অসংখ্য নদ-নদী ও খাল দ্বারা আবৃত। এই নদ-নদী ও খালগুলো সমগ্র সুন্দরবন ব্যাপী জালের মত ছড়িয়ে আছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই সুন্দরবনের যে কোন নদ-নদী ও খালগুলোতে নৌকা ভ্রমনের সময় উপভোগ করা যায় বনের আসল নির্জনতা ও বন্য প্রানীর অবাধ বিচরণ এবং সেই সাথে বনের দুই পাশে বৈচিত্রময় গাছ পালার সমারোহ। ভোরের নৌকা ভ্রমনে উপভোগ করা যায় সুন্দরবনের নানা রকম পাখির বৈচিত্র্যতা। দুপুরের নৌকা ভ্রমনে উপভোগ করা যায় লোনা পানির কুমিরের রোদ পোহানোর দৃশ্য এবং ভাগ্য সুপ্রসন্ন থাকলে উপভোগ করা যেতে পারে বিশ্ব বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগারের নদী বা খাল পারাপারের দৃশ্য। বিকেলের নৌকা ভ্রমনে উপভোগ করা যায় ছায়া ঘেরা পরিবেশে পাখ-পাখালীর কোলাহল এবং সেই সাথে নয়নাভিরাম চিত্রল হরিনের ও বানরের অবাধ বিচরণ। সুন্দরবনের স্থলভাগ যেহেতু জোয়ারের পানিতে সব সময় কাদাযুক্ত থাকে সেহেতু সুন্দরবনকে উপভোগ করার সবচেয়ে উৎকৃষ্ট উপায় হচ্ছে নৌকা ভ্রমন।
সুন্দরবনে নৌকা ভ্রমনের সময় বনের নির্জনতা ও বন্যপ্রানীর অবাধ বিচরণ উপভোগ করার জন্য ইঞ্জিনবিহীন দেশী নৌকা বা স্বল্প মাত্রার শব্দ যুক্ত নৌকা ব্যবহার করা উত্তম।
রাতের সুন্দরবনঃ সুন্দরবনে আমাবস্যার রাতের গভীর অন্ধকার কিংবা চাঁদনী রাতে ঝলমল করা বরণ্য প্রকৃতির এক ভিন্নরুপে আবির্ভুত হয়। এ সৌন্দর্য যেন এক বিস্ময়কর ব্যাপার। সুন্দরবনে রাত্রি যাপনের মাধ্যমে এই রাতের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। বিশেষতঃ সুন্দরবনে চাঁদনী রাতের সৌন্দর্য ও আমাবশ্যা রাতের সৌন্দর্যের রূপ ভিন্ন ভিন্ন। চাঁদনী রাতে চাঁদের আলো যখন বনের উপর ছড়িয়ে পড়ে তখন হালকা আলোতে বনের গাছ-গাছালীর সৌন্দর্য এবং বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর চোখ থেকে লাল আলো ছড়ানোর দৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। আর আমাবশ্যার রাতে বনের আসল নির্জনতা উপলব্দি করা যায়। আমাবশ্যার রাতে সুন্দরবনের বৃক্ষের উপর জোনাকী পোকার আলো ছড়ানোর দৃশ্য সত্যিই অতুলনীয়। রাতের অন্ধকারে নির্জন বনের ভিতর পোকামাকড় ও পাখির কিচিমিচির ডাক,হরিণ ও বানরের ডাক, বেঙ্গল টাইগারের গর্জন এবং সমুদ্রের কোলে ঢেউয়ের গর্জন এখানকার রাতের সৌন্দর্যকে আরও আকষনীয় ও অপরূপ করে তোলে। এ যেন নিস্তব্ধ নির্জন বনের যথার্থ মাধুর্য্য উপভোগ করার শ্রেষ্ঠ স্থান। সুন্দরবনের রাতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে ইঞ্জিন বিহীন দেশী ছোট ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে যে কোন খাল বা ভাড়ানীতে ঢুকে পড়লে এর সৌন্দর্যকে ভালভাবে উপভোগ করা যায়।
২৪ ঘন্টার সুন্দরবনঃ ২৪ ঘন্টার সুন্দরবন কমপক্ষে ছয়বার তার রূপ বদলায়। সন্ধ্যায়, মধ্যরাত্রী, ভোর, সকাল, দুপুর এই সময় গুলোতে সুন্দরবন বিচিত্ররুপে ধরা দেয়। এ ছাড়া মেঘযুক্ত আকাশ, বর্ষনে, ঝড়ে সুন্দরবনের বিচিত্ররূপ দেখতে হলে দেখার মত মানসিকতা থাকতে হবে এবং ধৈর্য্য নিয়ে দেখতে হবে। সুন্দরবনের নিস্তবতা এক ধরণের নৈস্বর্গিক বিষয়। ঠিকমত সুন্দরবনের রূপ ও এর বন্যশব্দ যদি কেহ তার সকল ইন্দ্রিয় দিয়ে অনুভব করে তা হলে সে স্বর্গীয় আনন্দ পেতে পারে। এ জন্যই সুন্দরবন ইকোট্যুরিজমের ক্ষেত্রে অনন্য।
-চলবে
No comments:
Post a Comment